Saturday, November 23, 2024
জাতীয়

স্বপ্ন হলো সত্যি, শতভাগ দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু

সব অনিশ্চয়তাকে মিথ্যা প্রমাণ করে অবিশ্বাস্য এক স্বপ্ন বাস্তবায়ন করল বাংলাদেশ। দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজবকে ছাপিয়ে স্বপ্ন হলো সত্যি। বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে গৌরবের অংশ হলো বাংলাদেশ। দৃশ্যমান হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যুক্ত হলো প্রমত্তা পদ্মার দুই পাড়।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) ৪১তম স্প্যান বসার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পদ্মাসেতুর স্প্যান বসানোর কাজ। প্রমত্তা পদ্মার বুকে দৃশ্যমান হলো ৬.১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ সেতু। অবশেষে সত্যি হলো স্বপ্ন। সংযুক্ত হলো পদ্মার এপাড়-ওপাড় মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা।

পদ্মাসেতুর সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। আর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর ভিত্তি স্থাপন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু।

ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পদ্মা সেতুর কাঠামো। সেতুর উপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

স্বপ্নের পদ্মা সেতু

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালে একটি প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

২০০৬ সালের মে মাসের মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার জেলা প্রশাসকদের থেকে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ২০০৭ সালের ১২ জুলাই ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প (ভূমি অধিগ্রহণ) অধ্যাদেশ, ২০০৭’ জারি করে সরকার। ২০ আগস্ট, ২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সম্বলিত পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়।

পদ্মা সেতু নির্মাণে এডিবি ৩৫০ মিলিয়ন, বিশ্বব্যাংক ৩০০ মিলিয়ন এবং জাইকা ১৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার আশ্বাস দেয়। তবে, ২০১০ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় বিশ্বব্যাংক তাদের অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে অন্য দাতারাও সেটি অনুসরণ করে।

পরবর্তীতে দুর্নীতি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কোনও প্রমাণ না পাওয়ায় কানাডিয়ান আদালত পরবর্তীতে মামলাটি বাতিল করে দেয়। বর্তমানে প্রকল্পটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব সম্পদ থেকে অর্থায়ন করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত দেশের মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতু।

সব ঠিক থাকলে ২০২২ এর স্বাধীনতা দিবসে উদ্বোধন করা হবে স্বপ্নের এই সেতু। পদ্মা সেতু শুধু রড, সিমেন্ট, পাথরের কোনো অবকাঠামো নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ১৭ কোটি মানুষের আবেগ। বাংলাদেশের সক্ষমতার বৈশ্বিক উদাহরণ এবং আগামী দিনে দেশীয় অর্থনীতিতে অপার সম্ভাবনার হাতছানি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *