Saturday, November 23, 2024
মতামত

ছয় দফার ইতিহাস

১৯৪৭ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাঙালির সীমাহীন বঞ্চনার পরিপ্রেক্ষিতে ন্যায্য অধিকার ও অস্তিত্ব রক্ষার সুনিশ্চিত দলিল হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ১৯৬৬ সালের ছয় দফা
৪ ফেব্রুয়ারি ’৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে লাহোরে পৌঁছান। তখন তিনি ছিলেন দলের সেক্রেটারি। আর সভাপতি ছিলেন আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ।
তাসখন্দ চুক্তির ভিত্তিতে ৫ ফেব্রুয়ারি বিরোধী দলগুলোর ঐতিহাসিক সম্মেলনে অংশ নেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি শাসন-শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লা খানের নেতৃত্বে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী দল নিয়ে জাতীয় এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। পরেরদিনের আলোচ্যসূচিতে স্থান পাওয়ার জন্য সাবজেক্ট কমিটিতে বঙ্গবন্ধু ছয় দফা পেশ করেন।
আয়োজক পক্ষ এতে গুরুত্ত্বারোপ না করে বরং বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে পত্রিকায় রিপোর্ট করা হয়। এর প্রতিবাদে ৬ ফেব্রুয়ারি সম্মেলন বর্জন করে বঙ্গবন্ধু লাহোরে অবস্থানকালেই অনানুষ্ঠানিক ছয় দফা উত্থাপন করেন।
১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা এয়ারপোর্টে নেমে সাংবাদিদের ছয় দফার ব্যাখ্যা দেন বঙ্গবন্ধু। ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় এবং ১৩ মার্চ আর একটি মিটিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা পাস করা হয়।
এরই মধ্যে পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর নামে “আমাদের বাঁচার দাবি: ছয় দফা কর্মসূচি” শীর্ষক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে ২৩ মার্চ লাহোরে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা পেশ করেন বঙ্গবন্ধু। প্রণয়নের পর আতাউর রহমান খানসহ তৎকালীন পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী নেতার কাছে সমর্থন আদায়ের জন্য যান বঙ্গববন্ধু।
কারও সায় না পেয়ে আর আইয়ুব খানের “অস্ত্রের মুখে ছয় দফার জবাব হবে” হুমকিতে বঙ্গবন্ধু নিজেই পূর্ব বাংলার জনগণের কাছে ছয় দফা নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ছয় দফা জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাজউদ্দীন, সৈয়দ নজরুল, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরীকে নিয়ে যশোর, ময়মনসিংহ, সিলেটসহ প্রায় সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণ করেন বঙ্গবন্ধু।
৮ মে নারায়ণগঞ্জে পাট কারখানা শ্রমিমদের র্যালিতে অংশ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের অভিযোগ ও প্রতিরক্ষা আইনে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৩ মে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পল্টন ময়দানের জনসভায় ৭ জুন হরতাল ও মাসব্যাপী কর্মসূচির ডাক দেয় আওয়ামী লীগ। সামরিক জান্তার ১৪৪ ধারা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও গুলি উপেক্ষা করে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মজুর আমজনতা ছয় দফার দাবিতে কর্মসূচিতে অংশ নেন। ৭ জুন তেজগাঁওয়ের বেঙ্গল বেভারেজের শ্রমিক সিলেটের মনু মিয়া স্বৈরশাসকের গুলিতে প্রাণ হারানোর পরিপ্রেক্ষিতে প্রচণ্ড বিক্ষোভে টঙ্গী, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে শফিক, শামসুল হকসহ ১১ বাঙালি শহীদ হন। পুলিশ প্রায় ৮০০ লোক গ্রেপ্তার ও অগণিত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ’৬৭-র এপ্রিলে হাজতবাসী বঙ্গবন্ধুকে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবশেষে সব কারাবন্দর মুক্তির পর প্রায় তিন বছর অন্যায় কারাভোগ শেষে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনকে মূলে রেখে ফেডারেল রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছয় দফার প্রস্তাবনাসমূহ :
১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
৩. মুদ্রা বা অর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
৪. রাজস্ব, কর বা মুদ্রা সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
৫. বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

নাজমুল হুদা ওয়ারেছী চঞ্চল : কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা। সাবেক সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *